Friday, 19 July 2024

স্যুট এট সাইটের অর্ডার দিয়েছে ওবায়দুল কাদের

বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কারফিউ প্রসঙ্গে বলেছেন “এটা অবশ্যই কারফিউ। এটা নিয়ম অনুযায়ীই হবে এবং সেটা শুট অ্যাট সাইট হবে”।

অর্থাৎ, দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশের কথা জানিয়েছেন মি. কাদের।

ঢাকায় গণভবনে ১৪ দলের বৈঠকের পর কারফিউ জারি ও সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন।

তিনি বলেন, “আন্দোলনের নামে বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বিটিভি সম্পূর্ণরুপে পুড়িয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে”।

তিনি জানান, বৈঠকে ১৪ দলের নেতারা দেশের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও জনগনের জান-মাল রক্ষায় সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের কথা বলেন।

এছাড়াও এই বৈঠকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল বর্তমান সংকট উত্তরণে দেশবাসির সহযোগিতা চেয়েছেন বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।

আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ৮ দফা দাবি

শুক্রবার মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনজন প্রতিনিধির সাথে সরকারের তিনজন প্রতিনিধির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

যদিও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত ঐ বৈঠক থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা বা সিদ্ধান্ত আসেনি।

এ সময় শিক্ষার্থীরা সরকারের কাছে 'আট দফা দাবি' উত্থাপন করেন।

গণমাধ্যমকে তারা জানিয়েছেন, এই আট দফা দাবি মানলেই কেবল কোটা সংস্কারের এক দফা দাবি নিয়ে আলোচনা করতে সম্মত হবেন তারা।

সরকারের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা হলেন সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সহ-সমন্বয়ক তানভীর আহমেদ।

তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, গত কয়েকদিনে হত্যার ঘটনায় দায়ীদের বিচার, উসকানির জন্য ছাত্রলীগ এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনা এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সময়ে নিষ্ক্রিয় থাকা উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ।

এছাড়া, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়ের সকল মামলা প্রত্যাহার এবং জড়িতদের ভবিষ্যতে হয়রানি না করার নিশ্চয়তাও চাওয়া হয়েছে তাদের উত্থাপিত দাবিতে।

বৈঠকের পর গণমাধ্যমের সাথে কথোপকথনে যৌক্তিক সমাধানের আশাবাদ জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম জানান শনিবারও তাদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি চলবে।

Monday, 1 July 2024

জকিগঞ্জের গোলাম মোস্তফা একাডেমির শিক্ষার্থী নিখোঁজ হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে উদ্ধার করেছে জকিগঞ্জ পুলিশ।

জকিগঞ্জে টিকটকের পরিচয়ে এক স্কুল ছাত্রী কিশোরী টিকটকার আরেক কিশোরের হাত ধরে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১ জুলাই) ওই কিশোরীকে মৌলভীবাজার থেকে উদ্ধার করেছে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ।
জানা যায়, রোববার সকালে জকিগঞ্জ উপজেলার ৯নং মানিকপুর ইউনিয়নের এওলাসার (সিরাজপুর) গ্রামের এক কিশোরী মেয়ে ও জি.এম.সি. একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী বিদ্যালয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু বিকেলে বিদ্যালয় ছুটির পরও ওই কিশোরী আর বাড়ি ফেরেনি। পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে রোববার রাতে জকিগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে তাকে খুঁজে বের করতে তৎপর হয় পুলিশ। এক পর্যায়ে মোবাইল ফোন নাম্বার ট্র্যাকিং করে সোমবার সকাল ১০টার দিকে ওই কিশোরীকে মৌলভীবাজার শহর থেকে উদ্ধার করে জকিগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল। এ সময় সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার মৃত আবুল হাশেমের ছেলে টিকটকার ফরহাদ হোসেন (২১) ও মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার মৃত মোস্তফা মিয়ার ছেলে জুয়েল মিয়া (৪১) কে আটক করা হয়।

জকিগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুকান্ত চৌধুরী জানান, কিশোরীকে উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, টিকটকের মাধ্যমে সুনামগঞ্জের এক কিশোরের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিলো। তারপর ওই কিশোর ফুঁসলিয়ে কিশোরীকে নিয়ে যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজ ডায়েরীর পর পর পুলিশ কিশোরীকে উদ্ধার করেছে। সেই সঙ্গে টিকটকার কিশোরসহ ২ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Sunday, 30 June 2024

জকিগঞ্জের মোবাইল জার্নালিস্ট সাব্বির আহমদ এর ছোট ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত।

জকিগঞ্জের মোবাইল জার্নালিস্ট সাব্বির আহমদ এর ছোট ভাই শাহরিয়ার স্বপন। শুক্রবার বিকাল আনুমানিক ৪.৪৫ মিনিটে কানাইঘাট উপজেলার তিন নং দিঘীরপার ইউনিয়ন এর সড়কের বাজারের পুর্বে রামপুরা যাত্রী ছাউনির সামনে সি এনজি ও বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে নিহত হন বাইক চালক শাহরিয়ার স্বপন। জকিগঞ্জ সাবরেজিস্টার দলীল লেখক ভরণ সুলতানপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক (রজাক মরীব) ও হোসনে আরা হেপির ছেলে। 

জকিগঞ্জে সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নিখোঁজ

জকিগঞ্জের এওলাসার গ্রামের মাওলানা আবুল কালাম খানের ভাতিজী আবুল হোসেন খানের মেয়ে সিনহা জান্নাত খান আজ গোলাম মোস্তফা একাডেমি থেকে বাড়ি ফেরেনি। সম্ভাব্য সকল আত্বীয় স্বজন সহ অনেক যায়গায় খোজাখুজি করে কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। যদি কেউ মেয়েটির সন্ধান পেয়ে থাকেন নিচের নাম্বারে যোগাযোগ করতে অনুরোধ রইলো। 

01715128409
01753351559

Thursday, 7 December 2023

বগলে জুতা নেয়া রাতে বিছানায় কিভাবে ঘুমাতে হয় এমন প্রশিক্ষণ চাই না।

দেশে নতুন কারিকুলামে শিক্ষা দেয়ার উপযোগি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অনেকগুলো ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে। এরমধ্যে কিছু অবশ্য ফেইক কিংবা ভিন্ন কোনো দেশ ও বিষয়ের ভিডিও- যা সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণার জন্য কেউ কেউ নতুন কারিকুলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হিসেবে প্রচার করছেন। তবে অনেকগুলো ভিডিও প্রদর্শনের মাধ্যমে ছাত্রদের শেখানোর অংশ হিসেবে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া আসল ভিডিও বলে অনেকে জানিয়েছেন। 

আমি অবশ্য এগুলো দেখে খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছি। কয়েকটি ভিডিও যেমন- হাঁসের প্যাক প্যাক শব্দ করে দুই হাতকে ডানা বানিয়ে সামনে চলা, ব্যাঙের লাফ, ডিম ভাজি, বিছানা গুছানো ইত্যাদি অত্যন্ত চমৎকার। প্রতিদিন যদি কোনো শিক্ষক আধ-ঘন্টা হাঁস ও ব্যাঙের চলাফেরা লাফিয়ে লাফিয়ে দেখান তাহলে ছাত্রদের যা-ই শেখা হোক না কেন শিক্ষকদের বাধ্যতামূলক শরীর চর্চা হয়ে যাবে। মধ্য বয়সে ডায়বেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা সবার জন্য জরুরি। শিক্ষকরা এ প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান যদি নিয়মিত ক্লাসে প্রয়োগ করেন তাহলে শিক্ষক-ছাত্র সবাই সুস্থ থাকবে। তারপর ছাত্র-ছাত্রীরা বাড়ি থেকে ডিম ভাজি, বিরিয়ানি, ভূনা খিচুড়ি তৈরী করে নিয়ে আসলে দুপুরের খাবার দাবারও খারাপ হবে না। শরীর চর্চা ও সুষম খাবার গ্রহনের পর রাতে গুছানো বিছানায় চমৎকার ঘুম হবে। আর বিনোদনের জন্য নাচ-গান তো আছেই। এ পর্যন্ত ভালোই। ঘুম থেকে উঠে বিছানা গুছানোর দৃশ্য দেখে আমি অবশ্য কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম। ছাত্র-ছাত্রীরা বড় হয়ে কীভাবে ঘুমাবে সেই দৃশ্যও যদি প্রদর্শণ করতে হয় তাহলে ইজ্জতের সর্বনাশ হয়ে যাবে! অবশ্য দয়া করে পাঠ্যসূচি এতদূর পর্যন্ত যায়নি। শেখানোর জন্য সবকিছু প্রদর্শণ করতে হয় না- এ বোধটুকু আছে বলেই তারা আমাদের এমন দৃশ্য দেখানো থেকে বিরত থেকেছেন। তবুও মানুষ সমালোচনা করছে।

শিক্ষামন্ত্রী সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে বলেছেন, রান্না-বান্না এগুলো তো বাসায় করার কথা নয়। স্কুলেই এগুলো শিখবে। অবশ্য বাংলাদেশের কয়টি স্কুলে রান্না-বান্নার সরঞ্জাম কেনার বাজেট ও কিচেন সেট-আপ দেয়া আছে তা তিনি বলেননি। বলার প্রয়োজনও নেই। যা বলেছেন তা যদি না-ই বলতেন তাহলে তাঁকে দিয়ে বলানোর সাধ্য কারো ছিল না। জনগণের কথাতে কান দেয়ার সময় এখন আমাদের মান্যবর রাজনীতিকদের নেই। জানা গেছে ফিনল্যান্ডের কারিকুলামের অনুসরণে বাংলাদেশের কারিকুলাম নতুন করে সাজানো হচ্ছে। এবার প্রাইমারি ও হাইস্কুলের কয়েকটি ক্লাসে নতুন বই দেয়া হয়েছে। আগামী বছর অন্যান্য ক্লাসে দেয়া হবে। সরকারের অতি উন্নত (!) একটি প্রকল্প নিয়ে আমজনতার হৈচৈ শুনে অনেকেই অতি-বিরক্ত। আমজনতা না জেনে না বুঝে সবকিছু নিয়ে সমালোচনা করে! 

আসলে পাঠ্যপুস্তক প্রণেতাদের সঙ্গে আমজনতার কোনো যোগাযোগ নেই। যারা এসব প্রকল্প নেন তাদের কয়জনের সন্তান এই পাঠ্যসূচি অনুযায়ী সাধারণ স্কুলে পড়বে কিংবা পড়েছে?  গ্রাম-বাংলার হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী যেসব স্কুল ও সামাজিক পরিবেশে পড়াশোনা করে তার সঙ্গে কয়জন কারিকুলাম প্রণেতার জানাশোনা রয়েছে! যাদের জন্য সিলেবাস তৈরী করা হয় তারা এবং যারা তৈরী করেন তারা- মূলত দুই গ্রহের ভিন্ন বাস্তবতার মানুষ। একপক্ষের কাছে আরেক পক্ষ অপরিচিত। তাই আমজনতা সমালোচনা করছে দেখে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা অবাক হয়ে ভূত দেখছেন। আমজনতাও তাদেরকে চিড়িয়াখানার জন্তু ভেবে অবিরত প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। মাঝখানে সরকার সংশ্লিষ্ট  যারা বিষয়টি দেখার কথা তাদের সবদিক দিয়ে লাভ। প্রকল্প মানেই টাকা কামানোর অবারিত সুযোগ। তারা প্রথমে এই প্রকল্প থেকে হিসাবের টাকাগুলো লুটে নেবে। তারপর প্রতিবাদকারীদের কোনো কোনো প্রতিনিধিকে ডেকে নেবে তাদের বাসভবনে। মন দিয়ে এমনভাবে শুনবে যাতে মনে হয় এগুলো তারা এইমাত্র প্রথম শুনছে। তারপর অর্ডার দিবে এগুলো বদলানোর। যারা দেখা করতে গেলেন তারা মহাখুশি! আমরা নেত্রী/নেতা কে বুঝিয়ে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি। স্থানীয়ভাবে এই নেতারও দাম বেড়ে যাবে। আসল কাহিনি হচ্ছে আরেকবার পরিবর্তন করতে আরেকটি প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। আবার টাকার গন্ধ নাকে লাগবে। উফ! কী মজা!

উন্নত বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে নিশ্চয়ই। কিন্তু আমাদের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা বিবেচনায় না নিয়ে হুবহু কপি করতে গেলেই সমস্যা। তখন দেশীয় শিক্ষার বারোটা বাজবে, অন্যদিকে বিদেশি শিক্ষার সুফলও পাওয়া যাবে না। তাই প্রয়োজন কাস্টমাইজ করে প্রয়োগ করা। এখন কাস্টমাইজ করার সময় ও ধৈর্য্য কারো নেই। তাড়াহুড়ো করে প্রকল্প করতে হয়। কারণ প্রকল্প মানেই অনেক স্তরে অনেক টাকার সুগন্ধি ছড়ানো!

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল কয়েক বছর আগে। তখন ক্লাসে বেত ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আমাদের সময়ে শিক্ষকেরা ক্লাসে আসতেন চক, ডাস্টার ও বেত- এই তিনটি জিনিস নিয়ে। বেতের ভয়ে আমরা দুষ্টুমি না করে শিক্ষকদের কথা শুনতাম। বেত ছাড়া ক্লাস কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন তা শুনার জন্য শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা জানতে চেয়েছিলাম। বেশিরভাগ শিক্ষকই বলেছিলেন, এখনকার ক্লাস অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীন। যার ইচ্ছা সে শিখবে, যার ইচ্ছা সে দুষ্টুমি করবে। ছাত্র-ছাত্রীকে শাস্তি দিয়ে কোনো শিক্ষক নিজে বিভাগীয় শাস্তি পেতে চান না। তখন আমারও মনে হতো উন্নত বিশ্বে শাস্তি ছাড়াই উন্নত শিক্ষা দিতে পারলে আমাদের দেশে পারবে না কেন! আমেরিকায় আসার বছর খানেক পর আমার প্রাইমারী স্কুল পড়ুয়া ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা ক্লাসে দুষ্টুমি করলে শিক্ষক কী করেন? সে জানালো, তাদের ক্লাসে সবুজ, হলুদ ও লাল কার্ড রয়েছে। কেউ দুষ্টুমি করলে তাকে হলুদ ও লাল কার্ড দেখানো হয়। কারো ভাগ্যে এরকম কয়েকটি কার্ড জমে গেলে তাকে পরবর্তীতে বড় শাস্তি দেয়া হয়। যেমন- রিসেসের সময় সবাই খেলবে শুধু শাস্তিপ্রাপ্ত ছাত্রটি একা বসে থাকবে। আবার কখনও কখনও দুপুরের খাবারের রুমের এক কোণে শাস্তি হিসেবে না খেয়ে বসে থেকে সবার খাওয়া দেখবে। গত বছর লন্ডন শহরে বোনের বাসায় গিয়েছিলাম। সেখানে শুনলাম দুষ্টুমির জন্য স্কুল ছুটির পর আধাঘন্টা/এক ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয় ছাত্র-ছাত্রীকে। একজন শিক্ষককে ২৫/৩০ জন ছাত্র-ছাত্রীর ক্লাস সামলাতেও এরকম শাস্তির আয়োজন করতে হয়। ইউরোপ-আমেরিকায় বেত নেই তা সত্য। কিন্তু বিকল্প যা আছে তা কি প্রয়োগের সুযোগ বাংলাদেশের বাস্তবতায় আছে? যদি না থাকে তাহলে একজন শিক্ষক ৮০ থেকে ১০০ জন ছাত্র-ছাত্রীর ক্লাস কীভাবে সামলাবে তা কেউ ভাবে না। মূখস্ত বুলি আওড়ায় উন্নত দেশে পারলে আপনারা পারবেন না কেন? অবশ্য আমি ক্লাস সামলানোর অজুহাতে কিছুসংখ্যক শিক্ষকের মাত্রাতিরিক্ত অমানবিক ছাত্র নির্যাতনের ঘোর বিরোধী। এসব অসুস্থ শিক্ষকদের চাকরি থাকাই উচিত নয়। 

প্রসঙ্গে ফিরে যাই। নতুন কারিকুলাম নিয়ে কথা বলছিলাম এক  প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে। তিনি জানালেন ক্লাস সেভেন পড়ুয়া তার মেয়ে বাসায় এসে বিরিয়ানী রান্না করে স্কুলে নিয়ে যেতে চায়। তিনি মেয়েকে বলেছেন তোমার শিক্ষকদের গিয়ে বলবে উনারা যেনো তোমাকে প্রথমে রান্না স্কুলেই শেখান। তারপর বাসায় প্র্যাকটিস করবে। আরেক প্রধান শিক্ষিকা সম্পর্কে ভাবী হন। তিনি জানালেন তাকে নাকি প্রশিক্ষণে বলা হয়েছিল নাচতে হবে। বুড়ো বয়সে নাচতে হবে শুনে তিনি খুব আপসেট হয়ে পড়েন। ভাগ্য ভালো ছিল তার নাচার টার্ন আসার আগেই নামাজের সময় হয়ে যায়। তিনি নামাজে গিয়ে একটু দেরি করে ফিরেন যাতে আর নাচতে না হয়।   

এবার একটি গল্প বলে শেষ করে নেই। এক ছেলে জুতার দোকানে গেলো তার জুতা কিনতে। একহাজার টাকা বাজেটে জুতা কিনতে হবে। তার পায়ের মাপের সব গুলো জুতা দেখলো, কিন্তু তার পছন্দ হচ্ছে না। কিছু সময় দোকানে হাঁটাহাটি করে দেখলো খুবই সুন্দর ডিজাইনের একটি জুতা। তার পায়ের মাপের অন্যান্য জুতার চেয়ে ডিজাইন দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি চামড়াও ভালো। শুধু সাইজে একটু বড়। ভাবলো সেও ধীরে ধীরে বড় হবে। এক সময় যেহেতু জুতার মাপে পা বড় হয়ে যাবে তাই একই দামে ভালো জিনিসটি কেনা দরকার। যেই চিন্তা সেই কাজ। বাসায় এসে জুতা পরে বাইরে যায়। কিন্তু জুতা তো পায়ে আটকায় না। নতুন জুতার শখে অনেক কসরত করে পায়ের সঙ্গে জুতা আটকে রেখে বেরিয়ে গেল। এক সময় আর কিছুতেই জুতা পায়ে আটকে রাখতে পারেনি। পা সামনে চলে যায়, জুতা পেছনে পড়ে রয়।  অবশেষে চমৎকার ডিজাইনের জুতাটি বগলে নিয়ে খালি পায়েই তাকে বাসায় ফিরতে হয়।  

আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা চিন্তা না করে কোনো ভিন্ন দেশের সুন্দর শিক্ষাব্যবস্থা অনুকরণ করতে গেলে ঐ ছেলেটির মতো পুরো জাতিকে একসময় জুতা বগলে নিয়ে হাঁটতে হবে। দয়া করে শিক্ষাব্যবস্থায় কোনো পলিসি গ্রহনের আগে দশবার চিন্তা করুন। ঢাকা শহরের এসি রুমে না বসে প্রতিটি উপজেলায় যান। স্কুলগুলো দেখেন। শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলুন। তারপর এদেশের আর্থ-সামজিক পরিবেশ উপযোগী সিদ্ধান্ত নিন। 

মাহমুদ রহমান
ডিসেম্বর ৭, ২০২৩
মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্র।

Monday, 20 November 2023

ফ্রী ভাতা অলসতা ভিক্ষার মতো।

কৃষক তাহির আলীর গল্প:-

বাংলাদেশের বাসিন্দা তাহির আলী একজন কৃষক। দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার ছিলো। কর্মঠ তাহির আলী কৃষি খামারের সবজি ফলমুল বিক্রি করে বাচ্চাদের পড়াশোনার খরচ সহ পরিবারের সকল ভরনপোষণ চালাতেন। ছেলে দুইটা প্রায়ই বাবার কাজে সহযোগিতা করতো। আর মেয়েটা ঘরে মায়ের সাথে গৃহপালিত মুরগী, কবুতরের দেখাশোনা সেবাযত্ন করে। লেখাপড়ার খরচ ছিলো ষষ্ঠ শ্রেণীর মাসিক ফি ২৫ টাকা, সপ্তম শ্রেণীতে ছিলো ৩০ টাকা তখন ছাত্রছাত্রীদের জন্য তেমন কোন ভাতা ছিলো না। কৃষক তাহির আলীর বয়স যখন ৫০ বছর গ্রামের মেম্বার সাহেব ৬০ বছর ধরিয়ে বয়স্ক ভাতায় নাম অন্তর্ভুক্ত করে দিলেন। তাহির আলীর স্ত্রী অবশ্য আরো কয়েক বছর পরে বয়স্ক ভাতার অন্তর্ভুক্ত হন। তিনমাস ছয়মাস পরপর তাহির আলী ভাতার কিছু টাকা পান। তাই তিনি ভাবলেন আমার অভাব নেই। ধীরে ধীরে পরিশ্রম কমিয়ে নিলেন, অসুখে দেখা দিলো প্রতিমাসে দুই তিন হাজার টাকার ঔষধ কিনতে হয়। ছেলে গুলো আগের মতো বাবাকে সাহায্য করেনা। এদিকে বছর খানেক পরে তাহির আলীর স্ত্রী কাজ কাম না করায় বার্ধক্যজনিত রোগ দেখা যায়। আগের চেয়ে সংসারের আয়ের তুলনায় এখন ব্যয়ের হার বেড়ে গেছে। মাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় তাহির আলীর স্ত্রী মারা যান। বড় ছেলে পা ভেঙ্গে পঙ্গু  হয়ে যায় লেখা পড়ায় বিপর্যয় হলে বাবা ভাই এক বোনের দায়িত্ব নিতে ছোট একটা মুদি দোকান খোলেন। দুই ভাই মিলে যখন কোনমতে এই দোকানের ব্যবসার আয় দিয়ে সংসার চালাতেন এর একবছর পরে বড় ছেলে প্রতিবন্ধী ভাতার অন্তর্ভুক্ত হন। ধীরে ধীরে ছোট ভাইকে মুদির দোকানে সহযোগিতা কমাতে তাকলেন। ছোট ভাই দোকানে কিছু সময় দিয়ে দোকান বন্ধ করে স্কুলে যায়। বড় ভাই ভাতার টাকা পেয়ে খুশী হয়ে বসে বসে অলসতা বাড়তে থাকে। এভাবে তাহির আলী কাজকর্ম থেকে অব্যাহতি দেন। ঘরে অসুস্থ থাকায় ছয়মাস পরে তার মৃত্যু হয়।