লেখকঃ মাহমুদ রাহমান
লেখক ও কলামিস্ট
মিশিগান, আমেরিকা।
সারাদেশ ঘুরে ক্রসফায়ারের গল্প এখন সীমান্তবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জে। প্রথম ক্রসফায়ারের কৃতিত্ব নতুন ওসি সাহেব মীর নাসেরের। যিনি ওসি হিসেবে যোগদানের পর থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষনা দিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন ইতোমধ্যে। এই জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতায় তার ক্রসফায়ারের মাধ্যমে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডও ফেইসবুকে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনেকে তাঁকে ক্রসফায়ারের জন্য দন্যবাদ জানাচ্ছেন এবং মাদকের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের জন্য উৎসাহিত করছেন।
ফেইসবুকে আমার অনেক প্রিয় মানুষের স্ট্যাটাস ও কমেন্টসে ক্রসফায়ারের পক্ষে আনন্দ উল্লাস দেখে আমিও আনন্দিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তুঅপরাধ প্রবণ ক্রসফায়ার কেন একটা দেশে প্রয়োজন হয় তা যখন চিন্তা করি আঁতকে উঠি।কোন দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর যখন পুলিশ ও সাধারণ জনগনের কোন রকম অাস্থা থাকেনা তখন ক্রসফায়ার জনপ্রিয় হয়।এই জনপ্রিয়তা এক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বেচ্ছাচারী দুর্নীতিগ্রস্থ ও অপরাধপ্রবণ করে ফেলে। যার জলন্ত উদাহরণ নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডার। এভাবেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বড় অংশ যদি কখনো বিপথগামী হয়ে যায় তাহলে দেশ পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়তে বাধ্য। অর্থাৎ ক্রসফায়ার ও বিচারবহির্ভুত হত্যাকান্ড একটি সমাজের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি ও দেশের অকার্যকর পরিস্থিতির আলামত। এ আলামত দেখে সচেতন মানুষের আনন্দিত হওয়ার বদলে শংকিত হয়া উচিৎ।
অনেকদিন থেকে মাদকের যন্ত্রণায় জকিগঞ্জের মানুষ অতিষ্ঠ। অনেক তরুণ যুবকের জীবন ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে মাদকের ছোবলে। মাদকের বিরুদ্ধে ওসি সাহেবের জিরো টলারেন্সের ঘোষনা আমাদেরকে আশাবাদী করেছে। কিন্তু ক্রসফায়ারের মত শর্টকাট পথে না গিয়ে আইনি পদ্বতি অবলম্বন করে এগিয়ে যাওয়াই সম্ভবত
সঠিক পথ। গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তারের মত উচ্চমাত্রার এন্টিবায়োটি ব্যবহারের পরামর্শ না দিয়ে একজন দক্ষ চিকিৎসকের মত কাজ করুন। সস্থা বাহবায় গা ভাসিয়ে বেঅাইনী শর্টকাট পথে অপরাধ দমন করতে যাওয়া উচিৎ কি-না ওসি সাহেবের অভিজ্ঞতা ও পেশাগত বিচক্ষণতা দিয়ে বিবেচনা করা উচিৎ। যারা এ কাজে ওসি সাহেবকে উৎসাহিত করছেন তাদেরও বিবেচনা করা উচিৎ।
আপনার যারা আজ সাংবাদিক ও সরকারি দলের লোক হিসেবে আপাতত নিরাপদ বোধ করছেন তাদের জন্য বলছি। ধরুন, আপনার প্রতিপক্ষ বা প্রতিযোগী কোন সাংবাদিক যখন আপনাকে হত্যা করাতে চাইবে তখন হয়তো আইন-শৃংখলা বাহিনীর কোন অংশকে নারায়গঞ্জের মত ভাড়া করতে পারে।এ ক্ষেত্রে ঐ সাংবাদিকের নামে আগে দু' একটি নামলা থাকলেই চলবে। এমনিভাবে নিজ দলের মধ্যে পদ পদবির কারনে প্রতিযোগিতা সব সময়ই থাকে। কোন দুষ্টু লোকের প্রতিযোগী হিসেবে আপনি দাঁড়ালে এবং সে যদি দুষ্টু কোন আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য পায় তাহলে আপনার পরিণতিও করুণ হতে পারে। হয়তো এসব উদাহরণ এই ওসি সাহেবের ক্ষেত্রেও প্রয়োজ্য নয়। কিন্তু সব ওসি সাহেবরা যে খুব ভালো তা কেউই
হলফ করতে পারবেননা। আর ঐ ওসি সাহেব জকিগঞ্জের শেষ ওসি নন, উনার পরেও আরও অনেক ওসি আসবেন। ক্রসফায়ার জনপ্রিয় হলে ভবিষ্যতে এরকম দুষ্টু লোকেরা অন্যায় অবিচারের সুযোগ নিতে পারে।তাই রাষ্ট্রের আইন-কানুন মেনে সবারই পদক্ষেপ নেউয়া উনিৎ।
জানি এসব কথা এই রাষ্ট্রে এখন হাস্যকর। তবুও লিখছি একটু চিন্তা করার জন্য। আজ যাদের চিন্তা করার সুযোগ হবেনা, অধুর ভবিষ্যতে পরিস্তিতির শিকার হয়ে চিন্তা করার সুযোগ যে পাবেন- সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত।
আগষ্ট ২৫/২০১৯.
মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্র।
No comments:
Post a Comment