Thursday, 31 July 2025

শাহগলী বাজারের পরিত্যক্ত ব্রিকফিল্ডে পাচ যুবক মিলে স্কুল ছাত্রীকে গণধর্ষণ।

সিলেটের জকিগঞ্জে দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ সময় ধর্ষকরা ভিডিও করে ওই ছাত্রীকে জিম্মির মাধ্যমে টাকা দাবি করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে ওই ভুক্তভোগী ছাত্রী। এদিকে ঘটনার বিচারের দাবিতে ফুঁসে উঠেছেন এলাকাবাসী।

বুধবার (৩০ জুলাই) জকিগঞ্জ থানায় ওই মামলা করা হয়।

অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের নিদনপুর গ্রামের খছরুজ্জামানের ছেলে ইমরান আহমদ (২৩), খিলগ্রামের আব্দুল বাছিতের ছেলে তানজিদ আহমদ (১৮), মাইজগ্রামের আজাদ আহমেদের ছেলে শাকের আহমদ (২৪), একই গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে শাকিল আহমদ (২১) ও মনতৈল গ্রামের ফইজ আলীর ছেলে মুমিন আহমদ (২০)।

জানা যায়, স্থানীয় বারহাল এহিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই স্কুলছাত্রী শনিবার সকাল ১০টার দিকে সহপাঠী বন্ধু রাফির সাথে শাহগলী বাজারের পরিত্যক্ত আদিল ব্রিকফিল্ড এলাকায় বেড়াতে যান। সেখানে অভিযুক্ত ওই পাঁচ যুবক গোপনে তাদের ছবি তোলেন। এরপর ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন তাদের তিনজন। বাকি দু’জন তাদের সহযোগিতা করেন।

এদিকে ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার পর বুধবার বিকেলে বারহাল এলাকায় পৃথকভাবে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

এ বিষয়ে জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘শনিবার ঘটনাটি ঘটলেও প্রথমে ধামাচাপার চেষ্টা করা হয়। মঙ্গলবার রাতে খবর পেয়ে আমরা ভিকটিমকে তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই এবং পরিবারকে মামলা করার পরামর্শ দেই। বুধবার সকালে মামলা হওয়ার পর থেকে আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তবে মামলা করতে দেরি হওয়ায় আসামিরা আত্মগোপনে চলে গেছেন।’

Wednesday, 22 January 2025

শেখ হাসিনার আয়নাঘরে বন্দী করে রাখা হতো শিশুদের দেয়া হতো না মায়ের দুধ

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই পটপরিবর্তনের পর একে একে বের হয়ে আসছে সাবেক স্বৈরাচারী সরকারের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ নানা চিত্র।

আবারও সামনে এসেছে তার গোপন বন্দিশালা তথা ‘আয়নাঘর’ এর কথা। যেখানে নাকি শিশুদেরও আটকে রাখা হতো। সেখানে চলতো নির্যাতন, এমনকি জিজ্ঞাসাবাদের সময় চাপ সৃষ্টির জন্য শিশুদের ব্যবহার করা হতো। যার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ পান করতে দিতে অস্বীকৃতি জানানো হতো। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

গুম কমিশনের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, কমপক্ষে ছয়জন শিশু তাদের মায়েদের সাথে গোপন কারাগারে মাসের পর মাস কাটিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় মানসিক চাপ হিসেবে শিশুদের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত রাখাসহ বিভিন্ন উপায় ব্যবহার করা হতো।

৭৭ বছর বয়সী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে ঢাকা। ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন এক বিপ্লবের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতনের পর তিনি ভারতে পালিয়ে যান। শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছিল, যার মধ্যে শত শত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং আরও শত শত লোককে বেআইনিভাবে অপহরণ ও গুম করা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

কমিশন বলেছে যে তাদের কাছে ‘এমন একাধিক ঘটনার প্রমাণ রয়েছে যেখানে নারীরা তাদের সন্তানসহ নিখোঁজ হয়েছে। যার মধ্যে ২০২৩ সালের ঘটনাও রয়েছে।’

আরও বলা হয়েছে, একজন গর্ভবতী মহিলাকে তার দুই ছোট বাচ্চাসহ একটি আটককেন্দ্রে মারধর করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না’।

‘কখনো ফিরে আসেনি’:

কমিশন জানিয়েছে, একজন ভুক্তভোগী তদন্তকারীদের সেই আটক স্থানের ঘরটি দেখিয়েছেন যেখানে তাকে শৈশবে তার মায়ের সাথে রাখা হয়েছিল। এটি র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) পরিচালনা করতো। তবে তার মায়ের বিষয়ে কমিশনের প্রতিবেদনে লেখা ছিল, ‘তার মা আর ফিরে আসেনি।’

আরেকটি ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়েছে, এক দম্পতি এবং তাদের শিশুকে আটক করা হয়েছিল। যেখানে বাবাকে চাপ দেয়ার জন্য ‘মানসিক নির্যাতনের অংশ হিসেবে’ শিশুটিকে মায়ের দুধ পান করতে দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছিল।

ক্ষমতায় থাকাকালীন হাসিনার সরকার জোরপূর্বক গুমের ঘটনা অস্বীকার করে দাবি করেছিল, নিখোঁজদের মধ্যে কয়েকজন ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টাকালে ভূমধ্যসাগরে ডুবে গেছে। কমিশন জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অপহরণ প্রায় ২০০ বাংলাদেশি এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

গুম কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে বলেন, কিছু ভুক্তভোগী নির্যাতনকারী কর্মকর্তাদের সঠিক পরিচয় দিতে না পারলেও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে জড়িত বাহিনীকে শনাক্ত করা হবে। এই ক্ষেত্রে তারা নির্দেশদাতাকে জবাবদিহি করার সুপারিশ করবেন বলে জানান।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের পরিবারের ওপর এই নির্যাতনের প্রভাব বহুমুখী। গুরুতর মানসিক আঘাত থেকে শুরু করে আইনি ও আর্থিক চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে হচ্ছে তাদের।